Pages

বিশ্বভারতীতে পড়া, ভারতের শিক্ষা - Education in VISVA-BHARATI

সারা বিশ্বের শিক্ষার্থীদের জন্য এক মহামিলন ক্ষেত্র বিশ্বভারতী। রবীন্দ্র স্মৃতিবিজড়িত শান্তিনিকেতনের এই বিশ্বভারতী এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে রয়েছে শিশু শ্রেণী থেকে পিএইচডি পর্যন্ত শিক্ষালাভের ব্যবস্থা।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চেয়েছিলেন বিশ্বভারতী এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয় হবে, যেখানে বিশ্বের সব প্রান্তের ছাত্রছাত্রীরা এসে পড়ার সুযোগ পাবেন। ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর কবিগুরুর মনে এই স্বপ্ন উঁকি দেয়। ১৯১৬ সালের ১১ অক্টোবর কবিগুরু যুক্তরাষ্ট্র থেকে ছেলে রথীন্দ্রনাথকে এক চিঠিতে লেখেন, ‘শান্তিনিকেতন বিদ্যালয়কে বিশ্বের সঙ্গে ভারতের যোগের সূত্র করে তুলতে হবে। ওখানে সর্বজাতির মনুষ্যত্ব চর্চার কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে।কবিগুরু বিদেশ থেকে ফেরেন ১৯১৭ সালের ১৭ মার্চ। তারপর ১৯১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিশ্বভারতীর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার তিন বছর পর ১৯২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর শান্তিনিকেতনের আম্রকুঞ্জে দেশ-বিদেশের জ্ঞানী-গুণীর সামনে কবিগুরু আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বভারতীকে জনগণের উদ্দেশে উৎসর্গ করেন। বিশ্বভারতী সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করে সোসাইটির হাতে তুলে দেন জমি, বাড়ি, নোবেল পুরস্কার থেকে প্রাপ্ত অর্থ এবং তাঁর সব গ্রন্থের স্বত্ব। এরপর ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীজুড়ে গড়ে ওঠে শ্রীনিকেতন, কলাভবন, সংগীতভবন, শিক্ষাভবন, চীনাভবন, হিন্দিভবন ইত্যাদি। তারপর ১৯৫১ সালে ভারতীয় সংসদের আইনবলে বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। বর্তমানে বিশ্বভারতীতে পড়াশোনা করছেন প্রায় সাত হাজার ছাত্রছাত্রী। এর মধ্যে অনেক বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রী ও রয়েছেন।
বিশ্বভারতীর বিভিন্ন পাঠক্রম আর ভর্তির বিষয় নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন বিশ্বভারতীর প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা অমিতাভ চৌধুরী। বিশ্বভারতীর পাঠক্রম
বিশ্বভারতীতে শিশু শ্রেণী থেকে স্নাতকোত্তর শ্রেণী পর্যন্ত রয়েছে পড়ার ব্যবস্থা। রয়েছে এখানে শিশুদের পড়াশোনার জন্য আনন্দ পাঠশালা আর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পড়াশোনার জন্য রয়েছে পাঠভবন। এ ছাড়া রয়েছে কলেজ অব হিউম্যানিটিজের জন্য বিদ্যাভবন, কলেজ অব সায়েন্সের জন্য শিক্ষাভবন, কলেজ অব ফাইন আর্টসের জন্য কলাভবন, কলেজ অব মিউজিকের জন্য সংগীতভবন, টিচার্স ট্রেনিংয়ের জন্য রয়েছে বিনয়ভবন, কৃষিবিদ্যার জন্য রয়েছে পল্লীশিক্ষাভবন, আর প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের জন্য রয়েছে শিক্ষাচর্চা ভবন। এখানে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত পড়ানো হয় বাংলা মাধ্যমে। বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে ইংরেজি মাধ্যমে।
পাঠভবন
পাঠভবনে ভর্তি হতে পারে দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীরা। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় সংবাদপত্রে। পাঠভবনের ছাত্রছাত্রীদের জন্য রয়েছে হোস্টেল। বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীরাও এখানে ভর্তি হতে পারেন। ক্লাস হয় এখনো সেই গুরুকুলের ধাঁচে বিভিন্ন গাছের তলে। তবে বর্ষা নামলে শ্রেণীকক্ষে ক্লাস হয়। বিদ্যাভবন
বিদ্যাভবনে পড়ানো হয় বাংলা, সংস্কৃত, ইংরেজি, হিন্দি, ওড়িয়া, অর্থনীতি, ইতিহাস, ভূগোল, দর্শন, তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব ও গণিতে তিন বছরের বিএ অনার্স কোর্স। আরও পড়ানো হয় চীনা ভাষা ও সংস্কৃতি, তিব্বতি ভাষা, জাপানি ও পার্শিয়ান ভাষার বিএ অনার্সের চার বছরের কোর্স। সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিষয়ে দুই বছরের এমএ পড়ার সুযোগও এখানে রয়েছে।
এখানে জার্মান, ইতালীয়, রুশ, চীনা, তিব্বতি, ফরাসি, অহমিয়া, মারাঠি, তামিল, সাঁওতালি, ওড়িয়া, হিন্দি, আরবি, ফার্সি, বাংলা, উর্দু ও জাপানি ভাষাশিক্ষা কার্যক্রম রয়েছে। বিদ্যাভবনের পাঠক্রমে ভর্তি হতে হলে উচ্চমাধ্যমিকে শতকরা ৪৫ থেকে ৬০ নম্বর পেতে হয়। আর সংশ্লিষ্ট বিষয়ে থাকতে হবে শতকরা ৪৫ থেকে ৫৫ নম্বর। শিক্ষাভবন
এখানে পড়ানো হয় বিএসসি অনার্স এবং দুই বছরের এমএসসি। বিষয়: পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত, জীববিজ্ঞান, উদ্ভিদবিজ্ঞান, পরিসংখ্যান ও কম্পিউটার সায়েন্স। এমসিএ বা মাস্টার অব কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশনে পড়ানো হয় তিন বছরের কোর্স। বিএসসি অনার্সে ভর্তি হতে হলে প্রয়োজন শতকরা ৬০ থেকে ৭০ ভাগ নম্বর আর এমএসসিতে প্রয়োজন শতকরা ৫৫ ভাগ নম্বর।
বিনয়ভবন
এখানে পড়ানো হয় এক বছরের বিএড কোর্স এবং দুই বছরের এমএড কোর্স। আছে এখানে দুই বছরের ফিজিক্যাল এডুকেশনের তিন বছরের বিপিই কোর্স এবং দুই বছরের এমপিইর কোর্স।
কলাভবন
রয়েছে এখানে চার বছরের বি-ফাইন এবং ডিপ্লোমা ও দুই বছরের এম-ফাইন কোর্স। বিষয়: পেইটিং, ভাস্কর্য, গ্রাফিক আর্টস, আর্ট হিস্টরি এবং টেক্সটাইল ও সিরামিক ডিজাইন। এ ছাড়া রয়েছে ডিজাইনের ওপর দুই বছরের সার্টিফিকেট কোর্স। শতকরা ৪৫ থেকে ৫৫ নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীরা এখানে আবেদন করতে পারেন।
সংগীতভবন
এটি বিশ্বভারতীর খুবই গুরত্বপূর্ণ একটি শাখাএখানে শেখানো হয় রবীন্দ্রসংগীত, ভারতীয় উচ্চাঙ্গসংগীত, যন্ত্রসংগীত যেমন: সেতার, এসরাজ, তবলা, খাখোয়াজ, মণিপুরি ও কথাকলি নৃত্য ও নাটক।
বি-মিউজিক তিন বছরের কোর্স এবং এম-মিউজিক দুই বছরের কোর্স। এ ছাড়া রয়েছে সার্টিফিকেট কোর্স। উচ্চমাধ্যমিকে শতকরা ৪৫ নম্বর পাওয়া ছাত্রছাত্রীরা এখানে ভর্তি হতে পারেন। বি-মিউজিক থেকে শতকরা ৫৫ নম্বর পেলেই তবে আর এম-মিউজিকের ভর্তির আবেদন করা যায়
পল্লীশিক্ষাভবন
এখানে বিএসসি এগ্রিকালচারের চার বছরের অনার্স কোর্স এবং এমএসসি এগ্রিকালচারের দুই বছরের কোর্স পড়ানো হয়। বিষয়: এগ্রিকালচার, এগ্রোনমি, প্লান্ট প্রোটেকশন, এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন, হর্টিকালচার, এগ্রো কেমিস্ট্রি ও সোশ্যাল সায়েন্স। বিএসসির জন্য উচ্চমাধ্যমিকে এবং এমএসসির জন্য বিএসসি (এগ্রিকালচার) অনার্সের শতকরা ৬০ নম্বর থাকতে হয়। কীভাবে ভর্তি হওয়া যায়?সব বিষয়েই বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীরা ভর্তি হওয়ার জন্য বিবেচিত হয়ে থাকে।
প্রতিবছর মে মাসে ভারতের প্রধান প্রধান দৈনিক পত্রিকায় ভর্তিসংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নোটিশ বোর্ড ও ওয়েবসাইটেও দেওয়া হয় ওই বিজ্ঞপ্তি। আবেদন করার সম্ভাব্য শেষ তারিখ ৬ জুন। তবে ভর্তিসংক্রান্ত বিজ্ঞাপনেই সুনির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ থাকে। প্রতিযোগিতামূলক লিখিত পরীক্ষা এবং সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে ভর্তি করানো হয়। ভর্তি বিষয়ে বিশ্বভারতীর প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তার সঙ্গে ফোনে বা ডাকযোগে যোগাযোগ করা যেতে পারে। ঠিকানা: বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, ডাকঘর: শান্তিনিকেত, জেলা: বীরভূম, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত, পিন: ৭৩১২৩৫, ফোন: পিএবিএক্স-০০৯১-৩৪৬৩-২৬২৭৫১-এবং ০০৯১-৩৪৬৩-২৬২৬২৬। ই-মেইলে যোগাযোগ: visva-bharati@visva-bharati.ac.in, ওয়েবসাইট: www.visva-bharati.ac.in বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীরা এখানের সব বিভাগে পড়ার সুযোগ পেয়ে থাকেন। ভর্তি ফরম বিশ্বভারতীর ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করে সংগ্রহ করা যেতে পারে। সাধারণত দুই ধরনের ছাত্রছাত্রী এখানে ভর্তির সুযোগ পান। এক. ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়ে। দুই. সেলফ ফিন্যান্স বা নিজস্ব খরচে।
এখানে ছাত্রদের থাকার জন্য আছে ইন্টারন্যাশনাল ছাত্রাবাস। কিন্তু আসনসংখ্যা খুব কম২২টি। এই হোস্টেলে বর্তমানে ১১ জন বাংলাদেশি ছাত্র থাকেন। এ ছাড়া ছাত্রদের বিভিন্ন বেসরকারি মেস রয়েছে। অন্যদিকে, ছাত্রীদের জন্য রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল গার্লস হোস্টেল। এখানেও আসনসংখ্যা সীমিত২২টি। এর মধ্যে ২০ জনই বাংলাদেশি ছাত্রী। বাকি দুজন ইন্দোনেশিয়া ও মরিশাসের। হোস্টেল ছাড়াও শান্তিনিকেতনের বেসরকারি হোস্টেল বা মেসে থেকে লেখাপড়া করছেন অনেক বাংলাদেশি ছাত্রী। বিভিন্ন বিভাগে ভর্তির খরচ ভিন্ন ভিন্ন। তবে তা ভারতীয় রুপিতে পাঁচ থেকে সাত হাজার রুপির মধ্যে। মাসিক বেতন ২০০ রুপির মতো। আর হোস্টেলের মাসিক ভাড়া মাত্র ২০০ রুপি।

6 comments:

Shamim Ahamed said...

শিশু শ্রেনী হতে পিএসডি পর্যন্ত শিক্ষা লাভের জন্য এটি মহামিলন ক্ষেত্র।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিষয়ক সংবাদ আপনি পাবেন
Education News

সংবাদ ছাড়াও আপনার শিক্ষা থাকবে এখানে।
Education

Unknown said...

১০ শ্রেনী পাস করার পর এখানে ভর্তির জন্য আবেদন করা যাবে?

Siddartha said...

যাদের এডুকেশন গ্যাপ আছে, তারা যদি বি এস সি/এম এস সি কোর্সে এডমিট হতে চায় তাদের সে সুযোগ আছে কি?

Unknown said...

যারা বাংলাদেশ থেকে এস.এস.সি পাশ করেছে তারা কি সরাসরি কলেজে ভর্তি হতে পারবে

Unknown said...

বিশ্বভারতীতে কি ডিজাইন নিয়ে কোন কোর্স করানো হয়?

Unknown said...

বিশ্বভারতীতে পড়ার জন্য কোনো বৃত্তি পাবো কি?

Post a Comment