Tax Return and Tax Identification Number of Bangladesh
আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন দাখিল আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড(এনবিআর) প্রথমবারের মতো অনলাইনে রিটার্ন নেওয়া শুরু করেছে। তবে এবার কেবল কর অঞ্চল-৮-এ এই সুবিধা থাকছে। এ ছাড়া এনবিআর প্রথমবারের মতো ট্যাক্স ক্যালকুলেটর চালু করেছে। এই ক্যালকুলেটরের মাধ্যমে যে কেউ নিজেই রিটার্ন তৈরি করতে পারবেন। এনবিআর এবারও আয়কর রিটার্নের ফর্ম পূরণের একটি নির্দেশিকা
প্রকাশ করেছে। এর মাধ্যমেও সহজে রিটার্ন পূরণ করা সম্ভব। এনবিআরের ওয়েবসাইটে এগুলো পাওয়া যাবে।
আয়কর আইন অনুযায়ী দুটি পদ্ধতিতে রিটার্ন দাখিল করা যায়। যেমন, সর্বজনীন পদ্ধতি ও সাধারণ পদ্ধতি। সর্বজনীন পদ্ধতিতে রিটার্ন বিনা প্রশ্নে গ্রহণ করা হয়। তবে এ পদ্ধতিতে দাখিল করা রিটার্নের মধ্যে একটি ক্ষুদ্র অংশের নিরীক্ষা হয়ে থাকে। আর সাধারণ রিটার্নটি কর কর্মকর্তা পরবর্তী সময়ে নিষ্পত্তি করেন।
Bangladesh Tax Return Forms- তিন ধরনের রিটার্ন ফর্ম:
রিটার্ন ফর্ম রয়েছে তিন ধরনের। যেমন, ব্যক্তিশ্রেণীর করদাতাদের রিটার্নের ফর্ম বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষায় চালু আছে। কোম্পানি করদাতার রিটার্নের ফর্ম ইংরেজিতে। এবার স্পট অ্যাসেসমেন্টের আওতায় করদাতাদের জন্য মাত্র দুই পৃষ্ঠার ভিন্ন একটি রিটার্নের ফর্ম চালু করা হয়েছে। এই ফর্ম ব্যবসা, চিকিৎসা ও আইন পেশায় নিয়োজিত তুলনামূলক কম আয়ের নতুন আয়করদাতাদের জন্য।
যেসব স্বল্প আয়ের ব্যবসায়ীর প্রারম্ভিক পুঁজি অনূর্ধ্ব আট লাখ টাকা, তাঁদের জন্য প্রদেয় আয়কর হবে দুই হাজার টাকা এবং প্রারম্ভিক পুঁজি ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত হলে দিতে হবে চার হাজার টাকা। আবার যেসব চিকিৎসক ও আইনজীবী পাঁচ বছর পর্যন্ত পেশায় নিয়োজিত আছেন, তাঁদের আয়কর দিতে হবে দুই হাজার টাকা এবং ১০ বছরের কম সময় পর্যন্ত পেশায় থাকলে দিতে হবে চার হাজার টাকা।
যেসব স্বল্প আয়ের ব্যবসায়ীর প্রারম্ভিক পুঁজি অনূর্ধ্ব আট লাখ টাকা, তাঁদের জন্য প্রদেয় আয়কর হবে দুই হাজার টাকা এবং প্রারম্ভিক পুঁজি ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত হলে দিতে হবে চার হাজার টাকা। আবার যেসব চিকিৎসক ও আইনজীবী পাঁচ বছর পর্যন্ত পেশায় নিয়োজিত আছেন, তাঁদের আয়কর দিতে হবে দুই হাজার টাকা এবং ১০ বছরের কম সময় পর্যন্ত পেশায় থাকলে দিতে হবে চার হাজার টাকা।
Description of Tax Form- ফর্মের বিবরন:
ব্যক্তিশ্রেণীর রিটার্ন আট পৃষ্ঠার। এর প্রথম পাতায় আছে করদাতার পরিচিতিমূলক তথ্য। দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় করদাতার বিভিন্ন খাতের আয় ও করের বিবরণ, তৃতীয় পৃষ্ঠায় বেতন ও গৃহসম্পত্তির আয়ের বিস্তারিত বিবরণসংবলিত আলাদা দুটি তফসিল, চতুর্থ পৃষ্ঠায় রয়েছে বিনিয়োগজনিত কর রেয়াতের একটি তফসিল ও দাখিল করা প্রমাণাদির তালিকা দেওয়ার ছক। রিটার্নের পঞ্চম ও ষষ্ঠ পৃষ্ঠায় করদাতার সম্পদ, দায় ও ব্যয় বিবরণী, সপ্তম পৃষ্ঠায় জীবনযাত্রার মান-সম্পর্কিত তথ্যের বিবরণী এবং শেষ পৃষ্ঠায় রিটার্নের ফর্ম পূরণের অনুসরণীয় নির্দেশাবলি রয়েছে।
নতুন করদাতা হলে রিটার্নের সঙ্গে পাসপোর্ট সাইজের এক কপি ছবি দিতে হয়। আর পাঁচ বছর পর পর করদাতাকে সত্যায়িত ছবি দিতে হয়। মনে রাখতে হবে, করদাতা যে বছর আয় করেন, তার পরের বছর হলো করবছর। যেমন ২০০৯ সালের ১ জুলাই থেকে ৩০ জুন ২০১০ পর্যন্ত সময় আয়বছর হলে করবছর হবে ২০১০-১১। করদাতা যদি একটি আয়বছরে কমপক্ষে ১৮২ দিন বাংলাদেশে থাকেন, তাহলে তিনি নিবাসী হিসেবে গণ্য হবেন, তা না হলে অনিবাসী। তবে কোনো ব্যক্তি যদি আয়বছরে কমপক্ষে ৯০ দিন বাংলাদেশে থাকেন এবং পরবর্তী চার বছরে সব মিলিয়ে কমপক্ষে ৩৬৫ দিন বাংলাদেশে অবস্থান করেন, তাহলেও তিনি নিবাসী হিসেবে গণ্য হবেন।
রিটার্নে অনেকগুলো তথ্য দিতে হয়। প্রথম দুই পাতায় রয়েছে আয়করদাতার বিবরণ এবং আয়ের মোট বিবরণ। এতে থাকছে মূলত নাম, ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, ইউনিভার্সাল টিআইএন (যদি থাকে), টিআইএন ও ভ্যাট নম্বর ইত্যাদি। বেতন-ভাতাসংক্রান্ত যেসব তথ্য দিতে হবে, তা হলো মূল ও বিশেষ বেতন, মহার্ঘ ভাতা, যাতায়াত, বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা, পরিচারক ও ছুটি ভাতা, সম্মানী, পুরস্কার ও ফি, ওভারটাইম ভাতা, বোনাস বা এক্সগ্রেসিয়া, অন্যান্য ভাতা, স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিলে নিয়োগকর্তা কর্তৃক দেওয়া প্রদত্ত চাঁদা-অর্জিত সুদ, যানবাহন সুবিধার জন্য বিবেচিত আয়, বিনা মূল্যে সজ্জিত বা অসজ্জিত বাসস্থানের জন্য বিবেচিত আয়, বেতন থেকে নিট করযোগ্য আয় এবং অন্যান্য। দ্বিতীয় অংশে দিতে হবে ভাড়া বাবদ বার্ষিক আয় ও দাবিকৃত আয়ের বিবরণ। এর মধ্যে রয়েছে মেরামত, আদায়, পৌর কর, অন্যান্য স্থানীয় কর, ভূমি রাজস্ব, ঋণের ওপর সুদ, বন্ধকি ও মূলধনী চার্জ, বিমা কিস্তি, গৃহসম্পত্তি খালি থাকার কারণে দাবিকৃত রেয়াত ইত্যাদি।
বিনিয়োগজনিত কর রেয়াতের বিবরণীও দিতে হবে। যেমন, জীবন বিমার কিস্তি, ভবিষ্যতে প্রাপ্য বার্ষিক ভাতাপ্রাপ্তির জন্য প্রদত্ত চাঁদা, স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিলে নিজের এবং নিয়োগকর্তা কর্তৃক দেওয়া প্রদত্ত চাঁদা, অনুমোদিত বয়সজনিত তহবিলে দেওয়া চাঁদা, অনুমোদিত ঋণপত্র বা ডিবেঞ্চার স্টক ও শেয়ারে বিনিয়োগ, ডিপোজিট পেনশন স্কিমে প্রদত্ত চাঁদা, কল্যাণ তহবিলে ও জাকাত তহবিলে দেওয়া চাঁদা, গোষ্ঠীবিমার অধীনে দেওয়া কিস্তি ইত্যাদি। সম্পদ, দায় ও ব্যয় বিবরণীর মধ্যে রয়েছে, ব্যবসার পুঁজি, কৃষি ও অকৃষি সম্পত্তি, বিনিয়োগ, গাড়ির ক্রয়মূল্য, অলংকার, ইলেকট্রনিক ও আসবাবপত্রের ক্রয়মূল্য, ব্যবসাবহির্ভূত অর্থসম্পদ, দায়, পারিবারিক ব্যয়, পরিবারের নির্ভরশীল সদস্যসংখ্যা ইত্যাদি। করদাতার নিজের পরিবারের সদস্য ও নির্ভরশীলদের সম্পদ ও দায় বিবরণীও দিতে হবে।
শেষ অংশ হচ্ছে জীবনযাত্রার ব্যয়বিবরণী। ১১ ধরনের তথ্য এতে জানাতে হবে। যেমন, ব্যক্তিগত ও ভরণপোষণ খরচ, উৎসে করকর্তনসহ বিগত অর্থবছরে পরিশোধিত আয়কর, আবাসনসংক্রান্ত খরচ, ব্যক্তিগত যানবাহন ব্যবহারসংক্রান্ত খরচ, আবাসিক বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, টেলিফোন বিল, সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ, নিজ ব্যয়ে বিদেশ ভ্রমণের খরচ এবং উৎসব ব্যয়সহ বিশেষ ব্যয়।
Tax Paying Information - গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয়:
কিছু কিছু ক্ষেত্রে আয় করমুক্ত। যেমন, যাতায়াত ভাতা ২৪ হাজার টাকা পর্যন্ত করমুক্ত, বাড়ি ভাড়া ভাতার ক্ষেত্রে মূল বেতনের ৫০ শতাংশ অথবা এক লাখ ৮০ হাজার টাকা—এ দুটির মধ্যে যেটি কম, সে পরিমাণ অর্থ করমুক্ত। এ ছাড়া চিকিৎসা ভাতার ব্যয়িত অংশ, স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিলে অর্জিত সুদ এবং পেনশন করমুক্ত।
সরকারের ইস্যু করা বন্ড বা সিকিউরিটিজ এবং ডিবেঞ্চার থেকে অর্জিত সুদ আয় হিসেবে রিটার্নে দেখাতে হবে। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কেনা হলে ঋণের সুদ সিকিউরিটিজ থেকে অর্জিত সুদ আয় থেকে খরচ হিসেবে বাদ দেওয়া যাবে। একজন ব্যক্তি করদাতার ক্ষেত্রে ডিবেঞ্চার সুদ ২০ হাজার টাকা এবং সরকারি সিকিউরিটিজে সুদ পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত করমুক্ত থাকবে। তবে উভয় খাত থেকে সুদ আয় থাকলে করমুক্তসুবিধা সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত থাকবে।
বাড়ি ভাড়া থেকে আয় দেখাতে হবে। এক বা একাধিক মাস বাড়ি খালি থাকলেও ১২ মাসের ভাড়া দেখাতে হবে। তবে খালি থাকা মাসের ভাড়া খরচ হিসেবে দাবি করা যাবে। করদাতার আয়ের উৎস কেবল কৃষি খাত হলে করমুক্ত আয়ের সীমা আরও ৫০ হাজার টাকা বাড়বে। অর্থাৎ তা হবে দুুই লাখ ১৫ হাজার টাকা।
স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার বা মিউচ্যুয়াল ফান্ড ইউনিট বিক্রি বা হস্তান্তর থেকে ব্যাংক বা অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মার্চেন্ট ব্যাংক, শেয়ার ডিলার/ব্রোকার কোম্পানির উদ্যোক্তা বা পরিচালকের আয় নতুন করবছর অনুযায়ী করযোগ্য। এ ছাড়া আয়বছরের যেকোনো সময়ে কোনো করদাতার কোনো একটি স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার থাকলে ওই কোম্পানির শেয়ার বিক্রি থেকে অর্জিত আয়ও করযোগ্য হবে।
একজন করদাতা নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বা দান করলে ১০ শতাংশ হারে আয়কর রেয়াত পাবেন। বিনিয়োগের খাতগুলো হলো, জীবন বিমার প্রিমিয়াম, সরকারি কর্মকর্তার প্রভিডেন্ট ফান্ডে চাঁদা, স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিলে নিয়োগকর্তা ও কর্মকর্তার চাঁদা, ডিবেঞ্চার ও স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ, কল্যাণ তহবিল ও গোষ্ঠীবিমা তহবিলে চাঁদা, সরকার অনুমোদিত ডিপোজিট পেনশন স্কিমে চাঁদা, সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে বিনিয়োগ এবং একটি কম্পিউটার বা ল্যাপটপ কেনা। আর দানের খাত হলো, জাকাত তহবিল, বোর্ড অনুমোদিত কোনো দাতব্য হাসপাতাল, প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে স্থাপিত প্রতিষ্ঠান, আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক, আহছানিয়া ক্যানসার হাসপাতাল এবং সরকার অনুমোদিত জনকল্যাণমূলক বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
Penalties for Tax Defaulter - রিটার্ন দাখিল না করলে:
রিটার্ন না দিলে আগে মোটা অঙ্কের জরিমানা দিতে হতো। তবে এখন জরিমানা অনেক কমানো হয়েছে। আগে জরিমানার পরিমাণ ছিল এককালীন আড়াই হাজার টাকা এবং প্রতিদিনের বিলম্বের জন্য ২৫০ টাকা। এখন উপকর কমিশনার সর্বশেষ কর নির্ধারণে আরোপিত করের ১০ শতাংশ পর্যন্ত এককালীন জরিমানা করতে পারেন। তবে এর পরিমাণ এক হাজার টাকার কম হবে না। এ ছাড়া রিটার্ন দেওয়ার সময় শেষ হওয়ার পর প্রতিদিনের ব্যর্থতার জন্য দিতে হবে ৫০ টাকা।
0 comments:
Post a Comment